দিনাজপুরে ফ্যাসিষ্ট সরকারের ডিলারদের নামেই মাল বিক্রি করছে বর্তমান সুবিধাভোগীরা

সাবেক আইনমন্ত্রী, সচিব ও হুইপের সহচর বুলবুলের ক্ষমতার উৎস কি?

দিনাজপুরে ফ্যাসিষ্ট সরকারের ডিলারদের নামেই মাল বিক্রি করছে বর্তমান সুবিধাভোগীরা

মাহফুজুল হক আনার

২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিল্পবের আগের কুশলিকেরা এখনো অধোরাই রয়ে গেছে। পর্দার অন্তরালে থেকে ব্যবসাসহ সকল কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমের সহচর ও সাবেক আইনমন্ত্রী এবং আইন সচিবের ঘনিষ্ঠজন ভূমি-দস্যু এক আয়কর আইনজীবী এখন বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছে। ছাত্র-জনতার হাতে আটক অতঃপর গনধোলাইয়ের শিকার সাধারণ পান দোকান থেকে সিআইপি বনে যাওয়া আলোচিত ঠিকাদার মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ওই কার্যালয়ে আশ্রয়ের পর লা পাত্তা হওয়ার বিষয়টি দিনাজপুরে টপ অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আমলে খাদ্য বিভাগের খোলা বাজারের চাল আটা বিক্রি ও টিবিসি’র মালামাল বিক্রয়ের ডিলার থেকে ঠিকাদারি কাজ সব কিছুই চলছে আগের মতই। বাতিল হয়নি ডিলার-শিপ। অভিযোগ রয়েছে এসব এখন দেখভাল করছে ছাত্র-জনতার বিল্পবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বর্ণচোর কিছু ব্যবসায়ী ও যুবক। খাদ্য বিভাগ টিসিবিসহ বিভিন্ন দপ্তর ও আগস্ট বিল্পবের আগে জেলার বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সুযোগ বুঝে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

পুরাতন জেলা শহর দিনাজপুরের এক নায়কের নাম কারোই অজানা নয়। বড় ভাই শপথ বাক্য পড়া বিচারপতি ও ছোট ভাই জাতীয় সংসদের হুইপ। হুইপ ইকবালুর রহিম সাধারণ মধ্যে নয় নিজ দল আওয়ামী লীগের মধ্যেও ছিল আলোচিত। তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগ ও দিনাজপুরের অপর ৫টি সংসদীয় আসনের সাবেক ৫ এমপি একদিকে ও হুইপ ইকবালুর রহিম একাই একদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল সর্বাধিক আলোচিত। ইকবালুর রহিমের পোষ্য নেতা কর্মীদের দিয়ে চাকুরী, ঠিকাদারি থেকে সব ক্ষেত্রেই লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। দিনাজপুর শহরের ষ্টেশনরোড এলাকায় একটি মাদ্রাসার নামে দলিলকৃত কয়েককোটি টাকার জমি ব্যাংকের নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করে আদালতের মাধ্যমে দিনে দুপুরে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে দখলের চিত্র দেখেছে দিনাজপুর বাসী। সাধারণ মুসুল্লি ও মাদ্রাসার এতিম শিশুরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তখন আওয়ামী লীগের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী’র হাতে হেনস্তা হতে হয় প্রতিবাদকারীদের। উল্লেখ্য মাদ্রাসার নামে দলিল থাকা এবং মাদ্রাসা কর্তৃক মামলা আদালতে চলমান ছিল এবং আছে। কিন্তু একটি পক্ষ কর্তৃক মাদ্রাসার জমিসহ আরো বিপুল পরিমান জমি বন্ধক রেখে ঋন নেয়। অভিযোগ রয়েছে প্রগতিশীল বাম ঘোড়ানার সাথে যুক্ত ঋন গ্রহনকারী মোটা অংকের অর্থ নিয়ে নিলাম বন্ধের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন না করে সাবেক হুইপের সহযোগী ও সাবেক আইনমন্ত্রী ও আইনজীবীদের ঘনিষ্ঠজন এডভোকেট বুলবুল উক্ত জমিটি ব্যাংক থেকে নিলামে ক্রয় করে নেন এবং দিনে দুপুরে শহরের কেন্দ্র স্থলে রেলস্টেশনের সামনে শত কোটি টাকার সম্পত্তিটি দখল করে নেন। দখলের পর সেখানে স্থাপিত হোটেলে হুইপ তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে আড্ডা ও ভুড়িভোজও করেন। এখন এই অফিসটি ব্যবহার হচ্ছে আওয়ামীলীগ ও তাদের দোসরদের রক্ষা ও পূনঃবাসনের কার্যালয় হিসাবে।

অপরদিকে সাধারণ পান দোকান থেকে সিআইপি বনে যাওয়া দিনাজপুরের সর্বাধিক আলোচিত ঠিকাদার শাহ আলমকে দিনাজপুর ষ্টেশনে ছাত্র-জনতা আটক করে গনধোলাই দিতে থাকে। পালিয়ে আশ্রয় নেয় আলোচিত বুলবুলের অফিসে। সেখান থেকে তাকে সরিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। আলোচনা রয়েছে কোটি টাকার বিনিময়ে রফাদফার মাধ্যমে হুইপের অর্থ যোগানদাতা হিসাবে পরিচিত ঠিকাদারকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার। উল্লেখ্য যে, উক্ত ঠিকাদার দিনাজপুর পৌরসভা ও এলজিইডি’র ৪২ টি প্যাকেজের কাজ একাই নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য হুইপ ইকবালুর রহিম ও তার চিহ্নিত দোসরদের এখনো আইনের আওতায় আনা যায়নি। বরং দিনাজপুরের স্বল্পমূল্যে কার্ডধারীদের টিসিবি’র সয়াবিন তেলসহ ভোগ্যপণ্য বিক্রয়ে ১৭ জন ডিলার ও ১২ পয়েন্টে চাল আটা বিক্রির নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়নি। ডিলারদের অনেকেই পালিয়ে থাকলেও তাদের নামেই মাল উত্তোলন ও বিক্রি করছে সুবিধাভোগী একটি মহল। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান উপর থেকে কোন নির্দেশনা না থাকায় তাদের কিছুই করার নাই।

বিভাগ : বাংলাদেশ